জিয়া চৌধুরী/ঢাকা
ঢাকার মগবাজারের ইস্পাহানি বালিকা বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী জান্নাতুল মাওয়া খুশবু। সোমবার ক্লাস শেষে বাড়ি ফেরার পথে জানালেন, ছয়টি বইয়ের মধ্যে চারটি পেয়েছেন। বাকি দুটি বই না থাকায় ক্লাসে সমস্যা হচ্ছে।
খুশুবু বেনারকে বলেন, “অনলাইনে বই থাকলেও পিডিএফ কিংবা ফটোকপি বই পড়ে আনন্দ পাওয়া যায় না। তবে শিক্ষকদের কাছে পুরনো বই আছে। সেখান থেকেই তারা পড়াচ্ছেন। আমাদের তাড়াহুড়া করে নোট নিতে হচ্ছে।”
একই বিদ্যালয়ে বই বিতরণ দেখভাল করা সহকারী শিক্ষক সুব্রত মণ্ডল সোমবার বেনারকে বলেন, প্রাক-প্রাথমিক থেকে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত সব বই শিক্ষার্থীরা পেয়েছে।
“তবে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির ছয়টি বইয়ের মধ্যে চারটি বই এসেছে। সপ্তম শ্রেণির কোনও বই না আসলেও ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণির বাংলা, ইংরেজি ও গণিতের তিনটি বই আমরা পেয়েছি,” যোগ করেন তিনি।
সব বই না আসায় কিছু সমস্যা তো হচ্ছেই, বই থাকলেও বাড়িতে গিয়েও পড়া সহজ হতো। তবে শিক্ষকরা পুরনো বই থেকেই ক্লাস নিচ্ছেন,” সুব্রত যোগ করেন।
ঢাকা থেকে অন্তত ২০০ কিলোমিটার দূরে মেঘনা উপকূলে লক্ষ্মীপুর জেলার একটি স্কুল তোরাবগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়। সোমবার পর্যন্ত এই বিদ্যালয়ে অর্ধেক বই পৌঁছায়নি বলে জানিয়েছেন সহকারী শিক্ষক রয়াল চন্দ্র দাস। তিনি বেনারকে বলেন, শিক্ষার্থীরা প্রতিদিন বই কবে আসবে জিজ্ঞেস করছে, সব বই না আসায় ক্লাস পুরোদমে শুরু করা যাচ্ছে না।
রয়াল চন্দ্র বলেন, মোট ৮৮৬ জন শিক্ষার্থীর তোরাবগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ে অষ্টম ও নবম শ্রেণির জন্য কোন বই আসেনি। তবে ষষ্ঠ, সপ্তম ও দশম শ্রেণির অর্ধেকেরও বেশি বই তারা পেয়েছেন।
একই এলাকার শিক্ষক ও দুই নারী শিক্ষার্থীর বাবা সানা উল্লাহ সানু বলেছেন, তারা দুই মেয়ে একজন দশম শ্রেণিতে ও আরেকজন সপ্তম শ্রেণিতে পড়ছেন।
“দুজনের বই নিয়ে মনমরা অবস্থা, দশম শ্রেণির মেয়েটি ১১টি বইয়ের মধ্যে ছয়টি pপেয়েছে, সপ্তম শ্রেণির মেয়ে পেয়েছে সাতটি। বাকি বই কবে পাবে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলতে পারছে না,” জানান তিনি।
একই অবস্থা নোয়াখালীর একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সানজিদা ইসলামের।
“স্যারেরা বলছেন, অনলাইন থেকে পিডিএফ বই নামিয়ে পড়তে। নতুন বছর মানে, নতুন ছাপা বইয়ের গন্ধ। অনলাইনের বই পড়ে কি আর মন ভরে?” প্রশ্ন করেন সানজিদা।
জানুয়ারি মাসের প্রায় তিন সপ্তাহ পার হলেও সোমবার পর্যন্ত সারা দেশে মাত্র ৩৭ শতাংশ বই পাঠাতে পেরেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। প্রাক-প্রাথমিক থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত প্রায় চার কোটি ৩৫ লাখ শিক্ষার্থীর জন্য ৪০ কোটি ১৫ লাখেরও বেশি বই ছাপতে হবে এনসিটিবিকে।
বিনামূল্যে প্রাক-প্রাথমিক থেকে নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের পাঠ্যবই দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ শাসনামলে। পরের বছর ২০১০ সালের ১ জানুয়ারি প্রথমবার বই উৎসব করে তৎকালীন সরকার। এরপর টানা ১৫ বছর শিক্ষার্থীদের হাতে বছরের প্রথমদিনে উৎসব করে পাঠ্যবই দেয়ার রেওয়াজ চালু করা হয়। দেড় দশকের সেই রীতিতে এবার ছেদ পড়ে।
যদিও সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, অপ্রয়োজনীয় খরচ এড়াতে অন্তর্বর্তী সরকার বাতিল করেছে ঘটা করে বই উৎসব।
ঢাকার মগবাজারের ইস্পাহানি বালিকা বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী জান্নাতুল মাওয়া খুশবু। সোমবার ক্লাস শেষে বাড়ি ফেরার পথে জানালেন, ছয়টি বইয়ের মধ্যে চারটি পেয়েছেন। বাকি দুটি বই না থাকায় ক্লাসে সমস্যা হচ্ছে।
খুশুবু বেনারকে বলেন, “অনলাইনে বই থাকলেও পিডিএফ কিংবা ফটোকপি বই পড়ে আনন্দ পাওয়া যায় না। তবে শিক্ষকদের কাছে পুরনো বই আছে। সেখান থেকেই তারা পড়াচ্ছেন। আমাদের তাড়াহুড়া করে নোট নিতে হচ্ছে।”
একই বিদ্যালয়ে বই বিতরণ দেখভাল করা সহকারী শিক্ষক সুব্রত মণ্ডল সোমবার বেনারকে বলেন, প্রাক-প্রাথমিক থেকে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত সব বই শিক্ষার্থীরা পেয়েছে।
“তবে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির ছয়টি বইয়ের মধ্যে চারটি বই এসেছে। সপ্তম শ্রেণির কোনও বই না আসলেও ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণির বাংলা, ইংরেজি ও গণিতের তিনটি বই আমরা পেয়েছি,” যোগ করেন তিনি।
“সব বই না আসায় কিছু সমস্যা তো হচ্ছেই, বই থাকলেও বাড়িতে গিয়েও পড়া সহজ হতো। তবে শিক্ষকরা পুরনো বই থেকেই ক্লাস নিচ্ছেন,” সুব্রত যোগ করেন।
ঢাকা থেকে অন্তত ২০০ কিলোমিটার দূরে মেঘনা উপকূলে লক্ষ্মীপুর জেলার একটি স্কুল তোরাবগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়। সোমবার পর্যন্ত এই বিদ্যালয়ে অর্ধেক বই পৌঁছায়নি বলে জানিয়েছেন সহকারী শিক্ষক রয়াল চন্দ্র দাস। তিনি বেনারকে বলেন, শিক্ষার্থীরা প্রতিদিন বই কবে আসবে জিজ্ঞেস করছে, সব বই না আসায় ক্লাস পুরোদমে শুরু করা যাচ্ছে না।
রয়াল চন্দ্র বলেন, মোট ৮৮৬ জন শিক্ষার্থীর তোরাবগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ে অষ্টম ও নবম শ্রেণির জন্য কোন বই আসেনি। তবে ষষ্ঠ, সপ্তম ও দশম শ্রেণির অর্ধেকেরও বেশি বই তারা পেয়েছেন।
একই এলাকার শিক্ষক ও দুই নারী শিক্ষার্থীর বাবা সানা উল্লাহ সানু বলেছেন, তারা দুই মেয়ে একজন দশম শ্রেণিতে ও আরেকজন সপ্তম শ্রেণিতে পড়ছেন।
“দুজনের বই নিয়ে মনমরা অবস্থা, দশম শ্রেণির মেয়েটি ১১টি বইয়ের মধ্যে ছয়টি পেয়েছে, সপ্তম শ্রেণির মেয়ে পেয়েছে সাতটি। বাকি বই কবে পাবে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলতে পারছে না,” জানান তিনি।
একই অবস্থা নোয়াখালীর একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সানজিদা ইসলামের।
“স্যারেরা বলছেন, অনলাইন থেকে পিডিএফ বই নামিয়ে পড়তে। নতুন বছর মানে, নতুন ছাপা বইয়ের গন্ধ। অনলাইনের বই পড়ে কি আর মন ভরে?” প্রশ্ন করেন সানজিদা।
জানুয়ারি মাসের প্রায় তিন সপ্তাহ পার হলেও সোমবার পর্যন্ত সারা দেশে মাত্র ৩৭ শতাংশ বই পাঠাতে পেরেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। প্রাক-প্রাথমিক থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত প্রায় চার কোটি ৩৫ লাখ শিক্ষার্থীর জন্য ৪০ কোটি ১৫ লাখেরও বেশি বই ছাপতে হবে এনসিটিবিকে।
বিনামূল্যে প্রাক-প্রাথমিক থেকে নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের পাঠ্যবই দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ শাসনামলে। পরের বছর ২০১০ সালের ১ জানুয়ারি প্রথমবার বই উৎসব করে তৎকালীন সরকার। এরপর টানা ১৫ বছর শিক্ষার্থীদের হাতে বছরের প্রথমদিনে উৎসব করে পাঠ্যবই দেয়ার রেওয়াজ চালু করা হয়। দেড় দশকের সেই রীতিতে এবার ছেদ পড়ে।
যদিও সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, অপ্রয়োজনীয় খরচ এড়াতে অন্তর্বর্তী সরকার বাতিল করেছে ঘটা করে বই উৎসব।
ইতিহাসের পরিবর্তনেই কি বিলম্ব?
দেশের প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের পাঠ্যবইয়ে সাহিত্যের পাশাপাশি ইতিহাসনির্ভর বিষয়ে বড় ধরনের পরিবর্তন এনেছে অন্তর্বর্তী সরকার। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকার শিক্ষাক্ষেত্রে সংস্কারের ঘোষণা দেয়।
এর অংশ হিসেবে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) ২০১২ সালের শিক্ষাক্রমের ভিত্তিতে পাঠ্যবইগুলো পরিমার্জন করে। নতুন বইগুলোতে স্বাধীনতার ঘোষণাসহ বেশ কিছু বিষয়ে সংযোজন-বিয়োজন করা হয়েছে।
বিশেষ করে বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে লেখা বিষয়বস্তু বাদ দেয়া হয়েছে। নতুন করে স্থান দেয়া হয়েছে জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের গল্প-কবিতা। বইয়ের প্রচ্ছদে শেখ মুজিবুর রহমান এবং মুক্তিযুদ্ধের নানা ইতিহাসের তথ্য ও ছবি বাদ পড়েছে। পাঠ্যবইয়ের পেছনের মলাটে শেখ হাসিনার বাণী বাদ দিয়ে যুক্ত হয়েছে জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের সময়ে শিক্ষার্থীদের আঁকা গ্রাফিতি।
পাঠ্যবইয়ের নিয়মিত কিছু লেখক যেমন সেলিনা হোসেন, কামাল চৌধুরী, মুহাম্মদ জাফর ইকবালের লেখা বাদ দেয়া হয়েছে।
“বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের টানা প্রায় ১৫ বছরের শাসনামলে প্রায় প্রতিটি শ্রেণির পাঠ্যবইতে মুক্তিযুদ্ধ ও শেখ মুজিবুর রহমানের ভূমিকাকে বেশি প্রাধান্য দেয়া হলেও নতুন বইতে মুক্তিযুদ্ধে মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, শেরেবাংলা একে ফজলুল হক ও শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের অবদানকে গুরুত্ব দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে,” যোগ করেন এনসিটিবি’র চেয়ারম্যান।
বই পেতে কেন এত বিলম্ব?
এনসিটিবির চেয়ারম্যান ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান বেনারকে বলেন, ৩১ জানুয়ারির মধ্যে দশম শ্রেণি ও প্রাথমিকের সব বই পৌঁছে দেবার সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিচ্ছেন তারা।
“বাকি বই আশা করছি ১৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে সারা দেশে পৌঁছাতে পারবো,” যোগ করেন তিনি।
এক প্রশ্নের জবাবে চেয়ারম্যান বলেন, শুধু পাঠ্যক্রম কিছু পরিবর্তনের কারণে নয় বরং সরবরাহকারীদের নিম্নমানের বই দিতে সতর্ক করায় বই ছাপতে দেরি হচ্ছে।
“ছাপার কাজ পাওয়ার আগে মোট ১১৬ জন প্রকাশক মিলে দাবি করেন গড়ে প্রতিদিনে ১ কোটি ১৬ লাখ বই ছাপতে পারবেন তারা। তবে বাস্তবে দেখা গেল প্রতিদিন গড়ে ৪০-৪৬ লাখ কপি বই ছাপা হচ্ছে। অনেক নজরদারির পর গত সপ্তাহে এটি ৮৬ লাখে উন্নীত হয়েছে,” যোগ করেন তিনি।
চেয়ারম্যান বলেন,বইয়ের মুদ্রাকরদের অনেকেই মূলত নিম্নমানের বই সরবরাহ করতে এক ধরনের কৃত্রিম সংকট তৈরি করতে চেয়েছিলেন। বইয়ের মানে আমরা কোন ছাড় দেইনি। আর্ট কাগজ আমদানি, পেপারমিল থেকে কাগজ সরবরাহ করা, নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ নিশ্চিত করা থেকে তাদের সব দাবি পূরণ করা হয়েছে। তবে বাজারে বাঁধাই শ্রমিকদের কিছুটা সঙ্কট আছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক ও শিক্ষাবিদ অধ্যাপক সিদ্দিকুর রহমান বেনারকে বলেন, দেরি যে কারণেই হোক, শিক্ষার্থীদের হাতে দেরিতে বই পৌঁছানো কোনও ইতিবাচক বার্তা দেয় না।
“এখনো ছাপা বই না পাওয়া গেলে কোনও না কোনওভাবে তাদের শিক্ষাজীবন ব্যাহত হবে। যত দ্রুত ছাপা বই পৌঁছানো যায়, তার উদ্যোগ নিতে হবে,” যোগ করেন তিনি।
সিদ্দিকুর রহমান বলেন, গ্রামে বা প্রত্যন্ত অঞ্চলে অনেকের অনলাইনে বই পড়ার অভ্যাস ও সুযোগ দুটোর কোনটাই নেই। তবে শিক্ষকরা উদ্যোগী হলে শিক্ষার্থীদের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবেন। সেজন্য শিক্ষকদের অতিরিক্ত সময় ও শ্রম দিতে হবে, আন্তরিক হতে হবে।
অনেক বছর ধরে সরকারি বই ছাপার কাজ করেন মুদ্রাকর তোফায়েল খান। তিনি বেনারকে বলেন, কাগজ আমদানিতে এলসি জটিলতা, পাঠ্যক্রমে বড় ধরনের পরিবর্তন, কাগজ ও শ্রমিকের সংকটের কারণে বই ছাপার কাজে দেরি হচ্ছে।
“পুরনো ঠিকাদারদের কাজ বাতিল করলেও ছাপাখানায় ক্যাপাসিটি ঘাটতি আছে বলে আমার মনে হয় না। সাধারণত বই ছাপার কাজ দেয়া হতো জুলাই-আগস্টে। আন্দোলনের মাঝে তাও বিলম্ব হলো। এর মধ্যে আবার পাঠ্যক্রমও পরিবর্তন-পরিবর্ধন করা হলো। সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বরে বই ছাপা হলেও এ বছর বই ছাপার কাজই শুরু হয়েছে ডিসেম্বরের শেষের দিকে,” জানান তোফায়েল খান।
Copyright ©2015-2024, BenarNews. Used with the permission of BenarNews.